ঋতু বদল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি নিজের রূপ বদলে নিচ্ছে, ক্রমশ বাড়ছে শীত। আর শীত বাড়ার সাথে সাথে ঘরে ঘরে বাড়ছে সর্দি-কাশি, বুকে শ্লেষ্মা বা কফ জমার সমস্যা । বর্ষার স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় বা শীতকালে সর্দি-কাশির সমস্যাগুলো বেড়ে যায়। অনেকেই একে উপেক্ষা করেন সাধারণ সমস্যা ভেবে, এতে বিপদ আরও বাড়তে পারে। সময় মতো এই সমস্যার চিকিৎসা না করালে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে শ্বাসযন্ত্রে।
তবে কড়া কড়া ওষুধ বা সিরাপ খাওয়ার আগে এমন কিছু ঘরোয়া টিপস জেনে নেওয়া যাক যা সর্দি-কাশি, বুকে কফ বা শ্লেষ্মা জমার সমস্যার উপশমে বিশেষ কার্যকরী হবে!
১) গরম পানির ভাপ বা সেঁক (Vapour): সর্দি-কাশির সমস্যায় গরম পানির ভাপ বা সেঁক (Vapour) নেওয়া একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। সর্দি-কাশির সমস্যার কারণে যদি আপনার নাক বন্ধ থাকলে গরম পানিতে লবন/ Menthol মিশিয়ে নিয়ে দিনে ২ বার করে ভাপ (Vapour) নিন। নাকের একপাশ দিয়ে টেনে অন্য পাশ দিয়ে বের করার চেষ্টা করুন। এতে জমে থাকা মিউকাস সহজেই বের হয়ে যাবে এবং সর্দি-কাশির সমস্যাও দ্রুত কমে যাবে।
২) আদা চা: গলায় খুসখুসে ভাব দূর করতে আদা চা অতূলনীয় । ২ কাপ পানি কিছুটা আদার কুচি দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে এর সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলেই গলার খুসখুসে ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আদা-মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান গলার গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া কমায় এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে।
৩) গরম পানিতে লেবুর রস: চায়ের পরিবর্তে গরম পানিতে এক চামচ পাতিলেবুর রসের সঙ্গে সমপরিমাণ মধুর মিশ্রণ দিনে ২ বার করে খেয়ে দেখুন। এই মিশ্রণ গলার ভিতরের সংক্রমণ দ্রুত কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও গ্রিন-টি পানের অভ্যাস করতে পারেন। উপকৃত হবেন।
৪) কলা: কলা একটি নন-অ্যাসিডিক খাবার যা গলা খুসখুসে ভাব কমাতে খুবই কার্যকরী! এ ছাড়াও কলা একটি লো-গ্লাইসেমিক খাবার যা ঠান্ডা লাগা বা সর্দি ভাব দ্রুত কমাতে সাহায্য করে।
৫) মধু: প্রতিদিন এক চামচ করে মধু খাওয়ার অভ্যাস করুন। মধু হচ্ছে উচ্চ ওষধিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ তরল। নিয়মিত মধু খাওয়ার অভ্যাস আপনার শ্বাসনালীর নানা সমস্যা দূরে রাখবে এবং সেই সঙ্গে সর্দি-কাশির সমস্যাও।
৬) গাজর: গাজরকে বলা হয় সুপার ফুড। গাজরের ভিটামিন ও মিনারেলস শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এই কারণেই চট করে সর্দি-কাশির মতো রোগগুলো শরীরকে কাবু করতে পারে না। তবে ঠান্ডা লাগলে কাঁচা গাজর না খেয়ে সেদ্ধ করেই খাওয়া উচিত।
৭) প্রচুর পানি পান করুন: সর্দি-কাশির সমস্যা হলে প্রচুর পানি পান করুন। প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে আসে। শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে গেলে সেটা ধীরে ধীরে বের হয়ে যায় নিজে থেকেই। তাই সর্দি-কাশির সমস্যায় সারাদিনে প্রচুর পানি পান করতে থাকুন।
এই সময়ে সর্দি-কাশির সমস্যা এড়ানোর জন্য নিচের ৪টি টিপস মেনে চলুন:
১) শাকসবজি: বাজারে এখন বাহারি সবজির সমাহার। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সবজির বিকল্প নেই। তাছাড়া বিভিন্ন ফল যেমনঃ নাশপাতি, আঙুর, কলা প্রভৃতি ফলও শরীর সুস্থ রাখতে ও রোগভোগ থেকে শরীরকে দূরে রাখতে অত্যন্ত কার্যকর।
২) খেলাধুল: শীতকালে দিন ছোট থাকায় বাচ্চাদের খেলাধুলা হয়ে ওঠে না। শরীর ভালো রাখতে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। মোবাইল, ল্যাপটপের বাইরে বেরিয়ে ঘণ্টাখানেক খেলতে পারলে অনেক চনমনে থাকবে শরীর।
৩) উপযুক্ত পোশাক: যেহেতু দিন আর রাতের তাপমাত্রার তারতম্য অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে এই সময়, তাই পোশাক নির্বাচনে সচেতন হোন। বেশি ভারী পোশাক এড়িয়ে চলুন।
৪) পরিচ্ছন্নতা: করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলেও শরীর জীবাণুমুক্ত রাখার অভ্যাস চালিয়ে যান। নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করুন। এ থেকে সংক্রমণ অনেকটা এড়ানো সম্ভব হবে।